আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারটি মার্কিন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে চমকপ্রদ এক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক, বিশ্ব রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাৎকারটি ইউটিউবে একদিনের মধ্যেই দুই কোটি ২০ লাখের বেশি দর্শক সংগ্রহ করে, যা স্পষ্ট করে যে মার্কিন জনগণের একটি বৃহৎ অংশ ট্রাম্পের বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করছেন।ট্রাম্প তার বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতির কঠোর সমালোচনা করে দাবি করেন, বাইডেনের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসরায়েল কোনো পদক্ষেপ না নিলে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে অসহায় অবস্থায় পড়ে যেত। তিনি বলেন, “ইসরায়েল যদি বাইডেনের কথা শোনে, তবে তারা এখনো তাদের মাথার ওপর বোমা পড়ার অপেক্ষায় থাকত।” এতে বোঝা যায়, ট্রাম্প ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে তাদের স্বাধীন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন। ট্রাম্প মনে করেন, ইসরায়েলকে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বজায় রাখা উচিত এবং বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েলের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলছে।
আরও জানুন-ইজরায়েলের ইরান আক্রমণের প্রস্তুতি: উঠছে আমেরিকার জড়িত থাকার প্রশ্ন
ট্রাম্প বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান অস্থিরতা ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে সংঘাতের দিকে যেতে পারে। তার মতে, মধ্যপ্রাচ্য এমন একটি অঞ্চল যেখানে বিশ্ব ধ্বংসের ঝুঁকি রয়েছে।মধ্যপ্রাচ্যের চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য এমন একটি অঞ্চল হবে, যেখানে বিশ্ব শেষ হয়ে যেতে পারে।” তিনি নবী-রাসূলদের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই অঞ্চল সম্পর্কে তাদের বলার মধ্যে কিছু সত্যতা থাকতে পারে। তার মতে, বিভিন্ন ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এই অঞ্চলই ধ্বংসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।ট্রাম্পের মতে, ইরানসহ বেশ কিছু শক্তি এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করছে, যা বিশ্বব্যাপী ধ্বংসের কারণ হতে পারে। ট্রাম্পের মতে, বাইডেনের পরামর্শ না মেনে ইসরায়েল তার নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বজায় রেখেছে যা দেশটির জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
পডকাস্টার জো রোগানের আগে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার গ্রহণ না করলেও সাম্প্রতিক সময়ে তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। জুলাই মাসে পেনসিলভানিয়ার একটি সমাবেশে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পর রোগান তার মতামত পরিবর্তন করেন এবং মনে করেন যে ট্রাম্পের বক্তব্য জনগণের কাছে পৌঁছানো জরুরি। রোগানের মতে, ট্রাম্পের বক্তব্য এবং তার ব্যক্তিত্ব গণতন্ত্রের জন্য হুমকি নয় বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি।
ট্রাম্প তার প্রশাসনের সময়কালে মধ্যপ্রাচ্যে অ্যাব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মাধ্যমে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ ছিল এবং এর মাধ্যমে তিনি অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। তিনি তার প্রচারণায় এই উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, পুনরায় ক্ষমতায় এলে তিনি এই চুক্তিকে আরও সুসংহত করবেন।
ট্রাম্পের মতে, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে ইরান অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা রক্ষায় ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে মত দেন। তার মতে, বাইডেন প্রশাসন ইরানকে তহবিল সংগ্রহ করতে সুযোগ দিয়েছে, যা এই অঞ্চলে সহিংসতা বাড়াচ্ছে।
এই সাক্ষাৎকারটি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, বিশেষত তার বিদেশনীতি ও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের প্রসঙ্গটি। ট্রাম্পের মন্তব্যগুলো বাইডেনের প্রশাসনের বিপরীতে শক্ত অবস্থানে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি বিশেষ করে মার্কিন ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের মতামত এবং বক্তব্য নির্বাচনপূর্ববর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ফেলছে, যা আমেরিকার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।
Leave a Reply