আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরের কারণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ১৫২ জন। আজ সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুর কারণে মোট ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর মধ্যে ৮০ জন পুরুষ এবং ৮৩ জন নারী। এছাড়া, দেশজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৯৩৮ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং দুইজন নারী। মৃত পুরুষদের বয়সের মধ্যে একজনের ৫৬-৬০ বছর, অপর একজনের ৫১-৫৫ বছর এবং তৃতীয়জনের বয়স ২১-২৫ বছরের মধ্যে। নারীদের মধ্যে একজনের বয়স ২৬-৩০ বছর এবং অন্যজনের ৬৬-৭০ বছর।
ডেঙ্গুর সঙ্গে যুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগ নিরলস কাজ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮২ জন রোগী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ছাড়া পেয়েছেন, যা একটি আশার খবর। তবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়ছে।
এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে, বিশেষ করে ঢাকা মহানগরী এবং তার আশেপাশের এলাকায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনসাধারণকে সতর্ক থাকার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছে। এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে হলে সকলকে মশা নিধনের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মশার প্রজননস্থল শনাক্ত ও নিধন করা জরুরি। বাসা-বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং জলাবদ্ধতা পরিহার করা হলে মশার বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট তারা। ডেঙ্গুর লক্ষণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য হলো: উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, এবং রক্তক্ষরণ। যদি কেউ এসব লক্ষণ অনুভব করেন, তবে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আরও জানুন –অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সতর্কতা: সঠিক ব্যবহার এবং ভুল ধারণা
ডেঙ্গু মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। রোগী শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বিশেষ বিভাগ খোলা হয়েছে যাতে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা যায়।
এছাড়া, জনসাধারণকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। মশার প্রজনন স্থান ধ্বংসের পাশাপাশি, পরিবারের সবাইকে মশারি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত, শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন।
সরকারও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সহযোগিতায় মশা নিধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া, মশা নিধনের জন্য রাসায়নিক স্প্রে ও অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের প্রতিটি অঞ্চলে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমাদের সবার সচেতনতা ও অংশগ্রহণ জরুরি। ডেঙ্গু একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ, তবে সচেতনতার অভাবে এর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। তাই নিজে সচেতন থেকে এবং অন্যদেরকেও সচেতন করতে আমাদের সকলের দায়িত্ব পালন করা উচিত।
আমাদের অভিজ্ঞতা এবং সচেতনতাই ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে আমাদের কার্যকরী অস্ত্র। আসুন, একত্রে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করি এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করি।
Leave a Reply