আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২০ পূর্বাহ্ন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক দুইটি হত্যাচেষ্টার ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মতামত ছড়িয়ে পড়েছে। অনলাইনে শিশুদের সুস্বাস্থ্য ও লালন-পালনের ওপর ভিডিও তৈরি করা ডেসরি নামে এক মার্কিন নারী যেমন বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের উপর সাম্প্রতিক হত্যাচেষ্টা সাজানো ছিল। আবার ডেনভার সিটিতে বসবাসকারী ক্যামিলি, যিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক, তিনিও একই ধারণা পোষণ করেন। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের বিশাল ফারাক থাকলেও, উভয়ের কাছেই ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টার ঘটনা নিয়ে একই ধরনের বিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। এই বিশ্বাসের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজব ছড়ানো।
ডেসরি, যিনি ‘ওয়াইল্ড মাদার’ নামে অনলাইনে ভিডিও তৈরি করেন, একজন রিপাবলিকান সমর্থক। তিনি চান, ডোনাল্ড ট্রাম্প আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হোক। অন্যদিকে, ডেনভার সিটির বাসিন্দা ক্যামিলি ডেমোক্রেটিক পার্টির দীর্ঘদিনের সমর্থক এবং ট্রাম্পের তীব্র বিরোধী। তবে তাদের মধ্যে একটি বিষয়ে মিল রয়েছে—তারা দুজনই বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টার ঘটনাগুলো আসলে সাজানো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য তাদেরকে এই ধারণায় পৌঁছাতে সহায়তা করেছে।
নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের ঘিরে গুজব বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো নতুন কিছু নয়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে। ডেসরি ও ক্যামিলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে যে তথ্যগুলো পেয়েছেন, তা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নয়। বিবিসি’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশেষ করে এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে এমন অনেক পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে, যেখানে কোনো প্রমাণ ছাড়াই বলা হচ্ছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা সাজানো হয়েছে। এই ধরনের পোস্টগুলো লাখ লাখ ভিউ পেয়েছে এবং অনেকেই তা শেয়ার করছেন। বেশিরভাগ পোস্ট ট্রাম্পবিরোধীদের অ্যাকাউন্ট থেকে এসেছে, তবে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত ভুয়া খবর ছড়ানোর তথ্যও পাওয়া গেছে।
এই ধরনের গুজব এবং ভুয়া তথ্য ছড়ানো রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো কী করছে? তারা সব সময়ই দাবি করে যে, ক্ষতিকর কনটেন্ট কমানোর জন্য এবং ব্যবহারকারীদের সুরক্ষায় তাদের নিজস্ব গাইডলাইন ও নীতিমালা রয়েছে। তবে বাস্তবিকভাবে সেগুলো কতটা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিবিসি এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, কোনো জবাব পায়নি।
মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর দুটি হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম হত্যাচেষ্টা হয়েছিল জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পেনসিলভানিয়ায়। একটি সমাবেশে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে ট্রাম্প বেঁচে যান, তবে অন্য একজন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে এবং আরও দুইজন গুরুতর আহত হন। এফবিআই পরে হামলাকারীর নাম প্রকাশ করে, যার নাম ছিল থমাস ম্যাথিউ। তার বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর।
এই ঘটনায় সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তার সক্ষমতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে, যার ফলে বাহিনীর প্রধান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং আরও কয়েকজন সদস্যকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়।
দুই মাসের ব্যবধানে আবারও ট্রাম্পের উপর হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। এবার ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ এলাকায় তার নিজের মালিকানাধীন গলফ ক্লাবে তিনি যখন খেলছিলেন, তখন তাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। তবে এইবারও ট্রাম্পের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এই ঘটনায় রায়ান ওয়েসলি রুথ নামে ৫০ বছরের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে ‘একে-৪৭’ সদৃশ একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তদন্তে জানা যায়, রুথ ইউক্রেনের পক্ষে বিদেশি যোদ্ধা সংগ্রহের কাজে জড়িত ছিলেন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ছড়ানো এই ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুধু তার সমর্থকদের মধ্যে নয়, তার বিরোধীদের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের মতামত তৈরি করছেন, যার মধ্যে প্রমাণহীন গুজবও রয়েছে। নির্বাচনের আগে এই ধরনের গুজব ছড়ানো রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর উপর নির্ভর করে কি সত্যিকার অর্থে ভুয়া খবর রোধ করা সম্ভব? তাদের গাইডলাইন এবং সুরক্ষা নীতি কতটা কার্যকরী তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। বিশাল সংখ্যক মানুষ যখন এসব মাধ্যমে গুজব ছড়ায় এবং তা লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, তখন তথ্যের সত্যতা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর সাম্প্রতিক হত্যাচেষ্টার ঘটনাগুলো নিয়ে ছড়ানো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং ভুয়া খবরের কারণে মার্কিন নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠছে। ডেসরি ও ক্যামিলির মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন মতাদর্শের মানুষরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবে প্রভাবিত হয়ে ট্রাম্পকে নিয়ে একই ধরনের ধারণা পোষণ করছেন। এর ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ভূমিকা ও দায়িত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো, গুজব এবং ভুয়া তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের আরও সচেতন হওয়া। নির্বাচনের আগে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা এবং ভুয়া খবর ছড়ানো বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে।
Leave a Reply