আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে দুই মার্কিন বিজ্ঞানী

চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে দুই মার্কিন বিজ্ঞানী

চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে দুই মার্কিন বিজ্ঞানী
চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে দুই মার্কিন বিজ্ঞানী

চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে দুই মার্কিন বিজ্ঞানী

চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে দুই মার্কিন বিজ্ঞানী

গত ৭ অক্টোবর, চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এই বছর যৌথভাবে দুইজন মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রাভকান তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কার মাইক্রোআরএনএ (microRNA) এবং এর পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকার জন্য এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাদের এই গবেষণা জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, বিশেষ করে রোগ নির্ণয়, ক্যান্সার চিকিৎসা এবং জিনগত সমস্যার সমাধানে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মাইক্রোআরএনএ (microRNA) কী?

মাইক্রোআরএনএ হলো ক্ষুদ্র, নন-কোডিং আরএনএ (RNA) যা জিনের কার্যকরী নিয়ন্ত্রণে মূল ভূমিকা পালন করে। সাধারণত এটি প্রায় ২২টি নিউক্লিওটাইড নিয়ে গঠিত এবং এটি মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) এর কার্যক্রম দমন করে প্রোটিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। মূলত, mRNA প্রোটিন তৈরির জন্য ডিএনএ থেকে বার্তা নিয়ে কাজ করে, আর microRNA সেই বার্তাকে বাধা দেয়। এর ফলে সুনির্দিষ্ট প্রোটিন উৎপাদন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়, যা জিন নিয়ন্ত্রণের একটি প্রধান উপাদান।

ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকান এর অবদান

ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রাভকান ১৯৯৩ সালে প্রথম মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেন। তাদের গবেষণা থেকে উঠে আসে যে, এই ক্ষুদ্র আরএনএ কণা জীবের জিনোমের বিভিন্ন অংশের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। তারা দেখিয়েছেন যে মাইক্রোআরএনএ কীভাবে পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল স্তরে জিনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা আগে বিজ্ঞানীরা জানতেন না।

এই আবিষ্কারটি জীববিজ্ঞানে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করে, কারণ এর মাধ্যমে জিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। অ্যামব্রোস ও রাভকানের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটির প্রভাব এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে অনুভূত হচ্ছে।

পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণ কী?

পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণ হলো একটি প্রক্রিয়া, যেখানে জিনের বার্তা বা mRNA ট্রান্সক্রিপশন সম্পন্ন হওয়ার পর প্রোটিনে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত হয়। এখানে microRNA একটি নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। এটি mRNA এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়াটি বাধা দেয়, যার ফলে নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটি জীবের জিনোমের কার্যকরী দিকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার এবং জিনগত রোগে microRNA এর ভূমিকা

মাইক্রোআরএনএ-এর আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। বিশেষ করে ক্যান্সার, জিনগত রোগ এবং স্নায়বিক রোগের ক্ষেত্রে microRNA-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে অনেক ক্যান্সার এবং জিনগত রোগের সঙ্গে মাইক্রোআরএনএ-এর কার্যক্রমের অস্বাভাবিকতা সম্পর্কিত। এর ফলে, ক্যান্সার এবং জিনগত রোগের নির্ণয় ও চিকিৎসায় মাইক্রোআরএনএ নির্ভর থেরাপির উন্নয়ন একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আরও জানুন –রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন তিন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, এনেছেন যুগান্তকারী আবিষ্কার

ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রাভকান এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ভিক্টর অ্যামব্রোস হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক এবং তিনি মলিকুলার বায়োলজিতে বিশেষজ্ঞ। তিনি তার দীর্ঘ গবেষণা জীবনে জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করেছেন, যার মধ্যে মাইক্রোআরএনএ তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত।

অন্যদিকে, গ্যারি রাভকান যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক এবং বায়োকেমিস্ট হিসেবে তিনি জিন নিয়ন্ত্রণের উপর ব্যাপক গবেষণা করেছেন। তার গবেষণা বিশেষ করে জিনোমিক্স এবং আরএনএ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

নোবেল পুরস্কারের গুরুত্ব

নোবেল পুরস্কার পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারগুলির একটি, যা ১৯০১ সাল থেকে প্রদান করা হয়ে আসছে। সুইডেনের বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসারে এই পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। নোবেল পুরস্কার ৬টি মূল বিভাগে দেওয়া হয়: পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, শান্তি, সাহিত্য, এবং ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতি। প্রতি বছর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গবেষক, লেখক এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা ব্যক্তিদের এই পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কারের প্রভাব

চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের জন্য অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস। প্রতি বছর এই পুরস্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে সব অবিস্মরণীয় অবদান রাখা হয়েছে, তা স্বীকৃতি দেয় এবং তা পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকদের জন্য দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করে। এই বছর ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রাভকান যে অবদান রেখেছেন, তা চিকিৎসাশাস্ত্রের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

ভবিষ্যতের চিকিৎসা গবেষণায় মাইক্রোআরএনএ-এর সম্ভাবনা

মাইক্রোআরএনএ-এর আবিষ্কার শুধুমাত্র একটি জৈবিক আবিষ্কার হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়, এটি জিনোমিক মেডিসিনের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বর্তমানে, মাইক্রোআরএনএ-এর উপর নির্ভর করে নির্ভুল চিকিৎসা (Precision Medicine) এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক থেরাপি (Personalized Therapy) উন্নয়ন করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী কয়েক বছরে এই প্রযুক্তি আরও বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহৃত হবে।

ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রাভকানের মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছে। তাদের যুগান্তকারী গবেষণা ভবিষ্যতের চিকিৎসা পদ্ধতি এবং জিন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই নোবেল পুরস্কার চিকিৎসাশাস্ত্রের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে এবং এটি নিশ্চিতভাবেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web