আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন
গ্রিন টি কি সত্যিই ওজন কমায় : গ্রিন টি অনেকেই পছন্দ করেন তার স্বাস্থ্যকর গুণাবলীর জন্য, বিশেষত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে। আমরা প্রায়শই শুনে থাকি যে গ্রিন টি পান করলে ওজন দ্রুত কমে যায়। কিন্তু আদতে কি শুধু ঘন ঘন গ্রিন টি পান করলেই ওজন কমে যাবে? না কি এর সাথে আরও কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক গ্রিন টি-র সঠিক প্রভাব এবং চা বানানো ও খাওয়ার সময় কী কী ভুল করলে আপনার ওজন কমানোর প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে।
গ্রিন টি কি সত্যিই ওজন কমায়?
গ্রিন টি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে একটি সহায়ক পানীয় হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের বিপাকক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। গ্রিন টি-তে উপস্থিত ক্যাটেচিন এবং ক্যাফেইন যৌগগুলো ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে, শুধুমাত্র গ্রিন টি পান করলেই ওজন কমবে—এমন ধারণা ঠিক নয়। ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি-র পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পরিমাণে শারীরিক ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন হয়।
গ্রিন টি-তে ঘন ঘন চুমুক দিলে কী হয়?
গ্রিন টি-তে ক্যাটেচিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। তবে গ্রিন টি দিনে মাত্রাতিরিক্ত পান করলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন—
ক্যাফেইনের অতিরিক্ততা: গ্রিন টি-তে থাকা ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে, কিন্তু এটি বেশি পরিমাণে পান করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ঘুমের ঘাটতি হলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
পেটের সমস্যায় পড়তে পারেন: অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করলে অনেকের পেটে অস্বস্তি বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, খালি পেটে গ্রিন টি পান করা থেকেও বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি অম্লতা বাড়িয়ে দেয়।
আয়রন শোষণে ব্যাঘাত ঘটে: যারা গ্রিন টি বেশি পান করেন, তাদের আয়রন শোষণে সমস্যা হতে পারে। তাই, গ্রিন টি পান করার সময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
আরো জানুন- অফিসে চেয়ারে বসে হঠাৎ পিঠে টান ধরেছে?
গ্রিন টি বানানোর সঠিক পদ্ধতি
গ্রিন টি-র গুণাগুণ অনেকাংশে নির্ভর করে কিভাবে এটি তৈরি করা হয়। সঠিক পদ্ধতিতে গ্রিন টি তৈরি করলে এর স্বাস্থ্যগুণ অটুট থাকে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। তবে অনেকেই গ্রিন টি তৈরি করার সময় কিছু সাধারণ ভুল করেন, যার ফলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
গরম পানিতে চা বানানো: অধিকাংশ মানুষই গ্রিন টি তৈরির সময় খুব গরম পানি ব্যবহার করেন, যা গ্রিন টি-র উপকারী উপাদানগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে। আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ৮০-৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বেশি তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করলে চায়ের স্বাদ তিতা হয়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত সময় ধরে চা ভেজানো: অনেকেই চায়ের পাতা বা ব্যাগ অনেকক্ষণ ধরে পানিতে ভেজিয়ে রাখেন, যা চায়ের স্বাদ এবং উপকারী গুণাবলীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আদর্শভাবে ২-৩ মিনিটের বেশি গ্রিন টি-র পাতা পানিতে রাখা উচিত নয়।
চিনি যোগ করা: ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি পান করা হয়, কিন্তু অনেকেই এতে চিনি বা মধু যোগ করে পান করেন। যদিও মধু স্বাস্থ্যকর, তবে অতিরিক্ত মধু বা চিনি যোগ করলে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময়
গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভুল সময়ে পান করলে এর উপকারিতা পেতে সমস্যা হতে পারে। কিছু নির্দিষ্ট সময়ে গ্রিন টি পান করলে আপনি এর থেকে সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে পারেন:
খাওয়ার পর: ভারী খাবার খাওয়ার পর গ্রিন টি পান করা যেতে পারে, কারণ এটি হজমে সাহায্য করে এবং মেটাবলিজমকে ত্বরান্বিত করে। তবে খাওয়ার সাথে সাথে পান করা উচিত নয়, অন্তত ৩০ মিনিট বিরতি দিন।
ব্যায়ামের আগে বা পরে: যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তারা ব্যায়ামের আগে বা পরে গ্রিন টি পান করতে পারেন। ব্যায়ামের আগে পান করলে এটি আপনার শরীরকে প্রস্তুত করে, আর পরে পান করলে এটি ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।
বিকেলের দিকে: দুপুরের খাবারের পর বা বিকেলের দিকে গ্রিন টি পান করা ভালো, কারণ এটি ক্লান্তি দূর করতে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। তবে সন্ধ্যার পর গ্রিন টি পান না করাই ভালো, কারণ এতে থাকা ক্যাফেইন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
গ্রিন টি পান করার সময় কী কী ভুল এড়িয়ে চলবেন
গ্রিন টি-র স্বাস্থ্যগুণ পেতে চাইলে কিছু সাধারণ ভুল এড়িয়ে চলা উচিত। অনেকেই জানেন না যে সঠিকভাবে গ্রিন টি না খেলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
খালি পেটে গ্রিন টি পান করবেন না: অনেকে সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করেন, যা পেটের অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। তাই খালি পেটে গ্রিন টি পান না করে, হালকা কিছু খাবারের পর এটি পান করুন।
অনেক বেশি চা পান করবেন না: দিনে ৩-৪ কাপের বেশি গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করলে এতে থাকা ক্যাফেইন এবং ক্যাটেচিন শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
খাওয়ার সাথে সাথে পান করবেন না: খাওয়ার সাথে সাথে গ্রিন টি পান করলে এটি আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। তাই, খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট বিরতি দিয়ে গ্রিন টি পান করুন।
গ্রিন টি ও ওজন কমানোর প্রক্রিয়া
গ্রিন টি আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে, তবে এটি কখনোই একমাত্র উপায় নয়। এটি শরীরের মেটাবলিজমকে ত্বরান্বিত করে এবং অতিরিক্ত ফ্যাট পোড়াতে সহায়তা করে, কিন্তু এর সাথে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক পরিশ্রমও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য এবং পর্যাপ্ত ঘুম ওজন কমানোর জন্য অপরিহার্য।
গ্রিন টি-র নিয়মিত এবং সঠিক উপায়ে পান করা ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে, তবে এটি একমাত্র সমাধান নয়। সঠিক পদ্ধতিতে গ্রিন টি তৈরি এবং পান করলে এর উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
Leave a Reply