আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন
গাজার অসহনীয় যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আহমেদ আবু আমশা একটি আলোকিত নাম। ৪২ বছর বয়সী এই সঙ্গীত শিক্ষক, যিনি শুধু সঙ্গীতের পাঠই দেন না, বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুদের জন্য আশার আলোও জ্বালানোর চেষ্টা করেন। যখন গাজার আকাশজুড়ে বোমার শব্দ, ধ্বংসস্তূপ আর মৃত্যুর ছায়া, তখন আবু আমশা সুরের মাধ্যমে সেই ভয়াবহতার মাঝে একটুখানি শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। যারা বেঁচে আছে, তারা ভুগছে খাবারের সংকট, পানির অভাব এবং নানা রোগের মধ্যে। অনেক শিশু তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছে, কেউবা হারিয়েছে তাদের শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। এই শিশুদের জন্য বেঁচে থাকাটা এখন শুধুই এক নির্মম সংগ্রাম।
গাজার শিশুদের এই করুণ পরিস্থিতিতে তাদের মানসিক অবস্থাও দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে, বোমা ও গোলার আওয়াজে তাদের ছোট ছোট হৃদয়গুলো ভয়ে কাঁপছে।
এমন সময়ে আহমেদ আবু আমশা তাদের জন্য সঙ্গীতের মাধ্যমে একটু হলেও স্বস্তি এনে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
যুদ্ধ শুরুর পর আবু আমশা এবং তার পরিবারকে উত্তর গাজা উপত্যকার বেইত হানুন থেকে পালিয়ে দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে আশ্রয় নিতে হয়েছে। খান ইউনিসের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তিনি তাদের শিশু ও তরুণদের জন্য সঙ্গীত শিক্ষার আয়োজন করেন, যেখানে গিটার বাজানো এবং গান গাওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সঙ্গীতের মাধ্যমে এই শিশুদের মধ্যে কিছুটা হলেও আনন্দের সঞ্চার ঘটাতে চেয়েছেন তিনি।
৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর গাজার উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধের অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। যুদ্ধ শুরুর আগে আবু আমশা ছিলেন উত্তর গাজা উপত্যকার একটি স্কুলের সঙ্গীত শিক্ষক।
কিন্তু যুদ্ধের তীব্রতায় তাকে দক্ষিণে পালিয়ে আসতে হয়। তার জীবনের মতোই অনেক ফিলিস্তিনি পরিবারকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অজানা এক ভবিষ্যতের পথে পা বাড়াতে হয়েছে।
সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে আশার আলো
আবু আমশা বুঝতে পেরেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সঙ্গীত কেবল বিনোদন নয়, বরং মানসিক শান্তি ও বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করতে পারে। শরণার্থী শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়েছে, তাদের মধ্যে বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে সঙ্গীতের মাধ্যমে সামান্য হলেও আনন্দের জোগান দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। গিটারের সুরে তিনি তাদের জীবনে একটুখানি রঙ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
আবু আমশার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কারণ যুদ্ধের মধ্যেও যখন সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তখন সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি শিশুদের মাঝে একটি নতুন আশার বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছেন।
গাজা আজ মৃত্যুরপুরি হয়ে উঠেছে, কিন্তু সেই ধ্বংসস্তূপের মাঝেও আবু আমশার মতো কিছু মানুষ আছেন, যারা সঙ্গীতের সুরে আশার আলো জ্বালাচ্ছেন।
Leave a Reply