আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন
টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের দীর্ঘ ইতিহাসে মুলতান টেস্ট একটি বিশেষ অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এই টেস্টে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা যে রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলা খেলেছেন, তা ক্রিকেট ইতিহাসে এক মাইলফলক হিসেবে থেকে যাবে। দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান, জো রুট ও হ্যারি ব্রুকের ব্যাটিং প্রদর্শনী শুধু এই ম্যাচকেই নয়, বরং টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্যকেও উজ্জ্বল করে তুলেছে। তাদের অসাধারণ ব্যাটিং পারফরম্যান্সের কারণে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৮২৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছে, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে।
জো রুট, ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মুলতান টেস্টে তিনি তার ব্যাটিং দক্ষতার আরেকটি অনন্য উদাহরণ দেখালেন। প্রথম ইনিংসে রুট ২৬২ রান করে আউট হন। তার এই ইনিংসে ছিল অসাধারণ ব্যাটিং কৌশল, ধৈর্য এবং নির্ভুল শটের মিশ্রণ। রুটের এই ডাবল সেঞ্চুরি ইংল্যান্ডের স্কোরকে বিশাল আকারে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। যদিও তিনি ট্রিপল সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন, তবুও আগা সালমানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
রুটের পর ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনে আরও একটি অসাধারণ কীর্তি স্থাপন করেন হ্যারি ব্রুক। তার ক্যারিয়ারের প্রথম ত্রিশতক এই ম্যাচেই আসে, যা তাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ব্রুকের ইনিংসটি ছিল ধৈর্য, পরিকল্পনা এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের এক চমৎকার উদাহরণ। ৩১৭ রান করে তিনি যখন আউট হন, তখন ইংল্যান্ডের স্কোর ৮০০ রানের বেশি হয়ে যায়। ব্রুকের এই ব্যাটিং ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটে নতুন প্রতিভার উত্থানের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন।
আরও জানুন –বিদায়বেলায় ভক্তদের পাশে চান সাকিব
ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৭ উইকেটে ৮২৩ রানে। এটি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি বিশাল স্কোর। এমন রান টেস্ট ম্যাচে বিরল, এবং এটি প্রতিপক্ষ দলের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। পাকিস্তান দলের বোলাররা ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের রুখে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলেও, জো রুট এবং হ্যারি ব্রুকের মতো ব্যাটসম্যানদের সামনে তাদের প্রতিরোধ ভেঙে যায়।
মুলতান টেস্টে পাকিস্তানের বোলারদের জন্য কাজটি ছিল অত্যন্ত কঠিন। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে পাকিস্তানি বোলাররা কোনও ধরনের সফলতা পাচ্ছিল না। আগা সালমান এবং শাহিন শাহ আফ্রিদির মতো প্রতিভাবান বোলাররাও ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের থামাতে ব্যর্থ হন। বিশেষত রুট ও ব্রুকের ইনিংসের সময় তারা কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেননি।
ইংল্যান্ডের ৮২৩ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নামার সময় পাকিস্তানকে মানসিকভাবে অনেক চাপ নিতে হয়। তারা যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে, তখন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল বড় রানের বোঝা সামলানো। যদিও পাকিস্তান দলের ব্যাটিং লাইনআপ শক্তিশালী, তবুও ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের সামনে তাদের প্রতিরোধ গড়ার কাজটি সহজ ছিল না।
এই টেস্টের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, ইংল্যান্ড স্পষ্টতই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের বিশাল স্কোরের সামনে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় ইনিংসে যথেষ্ট ভালো খেলতে হবে। যদি পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো পারফরম্যান্স দিতে না পারে, তাহলে ম্যাচটি ইংল্যান্ডের পক্ষে চলে যেতে পারে। ইংল্যান্ডের এই পারফরম্যান্স তাদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় জয় হিসেবে থেকে যাবে।
ইংল্যান্ডের এই ব্যাটিং পারফরম্যান্স টেস্ট ক্রিকেটে তাদের ধারাবাহিক সাফল্যের উদাহরণ। তারা শুধু মুলতান টেস্টেই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করে আসছে। তাদের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এমন কৌশলগত এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দেখানো, তাদের সাফল্যের একটি বড় কারণ। বিশেষ করে, জো রুট এবং হ্যারি ব্রুকের মতো প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানরা দলকে আরও শক্তিশালী করেছে।
মুলতান টেস্টে পাকিস্তানের বোলাররা ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের থামাতে ব্যর্থ হলেও, তাদের ব্যাটসম্যানদের সামনে এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান করার পরও মুলতান টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে এখন পাকিস্তানের ইনিংস হারের শঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসে রান ৬ উইকেটে ১৫২, ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের চেয়ে যা এখনো ১১৫ কম। শেষ পর্যন্ত যদি পাকিস্তান ইনিংস ব্যবধানে হেরেই যায়, তবে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে ৫০০ রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হারের রেকর্ড গড়বে।
মুলতান টেস্টের পরিপ্রেক্ষিতে ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান উভয় দলই নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করবে। ইংল্যান্ড এই টেস্ট থেকে আরও আত্মবিশ্বাস অর্জন করবে, এবং পাকিস্তান তাদের বোলিং ও ব্যাটিং উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতির পথ খুঁজবে।
মুলতান টেস্টে ইংল্যান্ডের ৮০০+ রানের পারফরম্যান্স ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত। জো রুট ও হ্যারি ব্রুকের অসাধারণ ব্যাটিং প্রদর্শনী, পাকিস্তানের বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। টেস্ট ক্রিকেটে এই ধরনের ম্যাচগুলোই টেস্ট ফরম্যাটের সৌন্দর্য এবং আকর্ষণকে বর্ধিত করে।
Leave a Reply