আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ পরিবর্তনের গুঞ্জন, তবে কি জাতীয় দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন সালাউদ্দিন ?বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চুক্তি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) সাথে রয়েছে। এর পরই জোর গুঞ্জন উঠেছে যে টাইগাররা নতুন কোচ পেতে পারে। যদিও এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, ক্রিকেটের অন্দরমহলে নতুন কোচ নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে, দেশের মধ্য থেকেই একজন প্রধান কোচ নিয়োগ দেওয়া উচিত কিনা, তা নিয়ে ক্রীড়ামহল ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত তুলে ধরছেন।
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল জাতীয় দলের কোচ নিয়োগে দেশের কোচদের সক্ষমতা নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। তিনি সরাসরি বলেছেন, “বর্তমানে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হওয়ার যোগ্যতা দেশের কারো নেই।” তার এই বক্তব্য নিয়ে ক্রিকেট মহলে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। তামিমের মতে, একজন জাতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য যে ধরনের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা প্রয়োজন, তা এখনো দেশের কোচদের মধ্যে সেভাবে তৈরি হয়নি।
তামিম ইকবালের এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন দেশের অন্যতম সেরা কোচ সালাউদ্দিন। তিনি বলেছেন, “তামিম সঠিক কথা বলেছে। জাতীয় দলে যে ক্রিকেটাররা প্রথমবার আসে, তখন আমরা কি ভাবি সে প্রস্তুত হয়ে এসেছে? খেলোয়াড়দের যদি ৫ বছর লাগে তৈরি হতে, তাহলে তো কোচদেরও সময় দেওয়া উচিত।” সালাউদ্দিনের মন্তব্যে স্পষ্ট, তিনি মনে করেন, দেশের কোচদের সময় ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া উচিত, যেন তারা ভবিষ্যতে জাতীয় দলের কোচ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন।
বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ড এখন সাবেক খেলোয়াড়দের কোচ হিসেবে নিয়োগের দিকে ঝুঁকছে। এ প্রসঙ্গে তামিম ইকবাল একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ভারতের ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস্টার’-কে বলেছেন, “অনেক দেশই এখন তাদের সাবেক ক্রিকেটারদের কোচ বানাচ্ছে।” তামিমের কথায় বোঝা যায়, বিভিন্ন দেশে জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব এখন দেশের অভ্যন্তরে থাকা সাবেক খেলোয়াড়দের দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) দীর্ঘদিন ধরে তাদের নিজস্ব কোচিং পদ্ধতি বজায় রেখে দেশীয় কোচদের প্রাধান্য দিয়ে আসছে। এর ফলে দেশটির ক্রিকেট কোচরা সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তরুণ খেলোয়াড়দের উন্নত করতে সাহায্য করছেন।
ভারতের মতো অন্য দেশগুলোও জাতীয় দলের কোচ হিসেবে সাবেক খেলোয়াড়দের নিয়োগ করছে। শ্রীলঙ্কা সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ক্রিস সিলভারউডের পরিবর্তে সনাৎ জয়াসুরিয়াকে প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ কোচদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং সময় দেওয়ার মাধ্যমে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে।
তামিম ইকবালকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলাদেশ কি ভারতের মতোই দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে কি না। এ প্রসঙ্গে তামিম বলেছেন, “বাংলাদেশকেও তেমন কিছু ভাবা উচিত।” তবে তামিম মনে করেন, এখনো দেশের কোচদের সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে সময় প্রয়োজন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এখনও দেশীয় কোচদের খুব কমই জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ সময়েই বিদেশি কোচদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যেমন হাথুরুসিংহে, রাসেল ডমিঙ্গো, স্টিভ রোডস, এবং আরও অনেকে। বিদেশি কোচরা অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক মানের কোচিং স্টাইল নিয়ে আসেন, যা দলকে উন্নত করতে সহায়তা করেছে।
তবে, ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের কোচদেরও যথাযথ সুযোগ এবং সাপোর্ট দেওয়া উচিত, যেন তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। বিশেষ করে, যারা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং বয়সভিত্তিক দলগুলোর কোচ হিসেবে ভালো ফলাফল করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে উন্নতি করা যেতে পারে।
হাথুরুসিংহের চুক্তি শেষ হওয়ার পর বিসিবি কী সিদ্ধান্ত নেবে তা নিয়ে এখনও পরিষ্কার কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি। বিসিবির অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা কোচ নিয়োগের বিষয়ে বেশ কৌশলী পদক্ষেপ নেবে এবং সঠিক সময়েই ঘোষণা দেবে। তবে, নতুন কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়ায় দেশীয় কোচদের গুরুত্ব দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
বিসিবির কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছেন এবং সম্ভাব্য নতুন কোচ নিয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রার্থী তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। তবে, দেশের কোচদের সঙ্গে কোনো প্রকার সংলাপ বা আলোচনা শুরু হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সঠিক কোচিং ব্যবস্থা এবং খেলোয়াড়দের উন্নতির ওপর। একজন সফল কোচ দলের মনোবল, টেকনিক্যাল দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলোয়াড়দের উন্নতি করার ক্ষমতা রাখেন। তামিম এবং সালাউদ্দিনের মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, দেশের কোচদের যথাযথ প্রস্তুতি এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কিছু সময় প্রয়োজন।
আরো জানুন …. টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের রাজত্ব, মুলতান টেস্টে ৮০০+ রানের বিশাল স্কোর
বিসিবি যদি নতুন কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশীয় কোচদের সুযোগ দেয়, তাহলে দেশের ক্রিকেটের জন্য এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হতে পারে। তবে, আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটের জন্য একজন কোচের প্রয়োজনীয়তা এবং অভিজ্ঞতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোচ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে অনেকটা কৌশলী হতে হবে।
তামিম ইকবালের মন্তব্য এবং সালাউদ্দিনের সমর্থন জাতীয় দলের কোচ নিয়ে একটি নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে। দেশের কোচদের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, সঠিক কোচ নির্বাচন করা, যিনি দলের খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত সময় এবং অভিজ্ঞতা দিতে পারবেন। বাংলাদেশের জাতীয় দলের উন্নয়নে এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
Leave a Reply