আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: ওয়ান-ইলেভেনের স্মৃতি এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিদৃশ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। এই সম্মেলনে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অতীতের ঘটনাবলী এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ওয়ান-ইলেভেনের স্মৃতি: অতীতের ছায়া বর্তমানে
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর বক্তব্যে 2007 সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালের কথা স্মরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা এক-এগারোর কথা ভুলতে পারি না। সেই সময় কিছু মহল দেশকে বিরাজনৈতিকীকরণের চেষ্টা করেছিল। এমনকি আমাদের দলকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াসও চালানো হয়েছিল।”
তিনি আরও যোগ করেন, “গণতন্ত্রের জন্য, রাজনীতির জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য এসব কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। যখন সেই চেহারাগুলো আবার সামনে আসে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ ও প্রশ্ন জাগে।”
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি: সতর্কতার আহ্বান
মহাসচিব বর্তমান সরকারের মধ্যে বিরাজনৈতিকীকরণের কোনো স্পষ্ট লক্ষণ দেখছেন না বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি সতর্কতার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “কিছু চেহারা আছে যাদের দেখলে আমরা ভয় পাই। যাদের কখনো দেখা যেত না, তারা হঠাৎ করে মিডিয়ার সামনের পাতায় চলে আসছে, নিজেদের মতামত ও তত্ত্ব প্রচার করছে। এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ভালো লক্ষণ নয়।”
সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দখলের অভিযোগ: বিএনপির প্রতিক্রিয়া
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন যে, 5 আগস্টের পর থেকে বিএনপিকে লক্ষ্য করে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দখল সংক্রান্ত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তিনি এই প্রচারণাকে “সুপরিকল্পিত চক্রান্ত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, “এই প্রচারণার পিছনে থাকা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জনসমর্থন নেই। জনগণ মনে করে না যে তারা সরকার চালাতে পারবে। তাই তারা এধরনের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা করে।”
নির্বাচন ও সংলাপের আহ্বান
বিএনপির মহাসচিব জোর দিয়ে বলেছেন যে তাদের লড়াই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি বলেন, “নির্বাচন আমাদের অধিকার। আমরা এতদিন ধরে নির্বাচনের জন্যই লড়াই ও সংগ্রাম করে আসছি।”
তিনি অতিদ্রুত সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। নইলে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকার: সময় ও সহযোগিতার প্রসঙ্গ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে একটি আন্দোলন-বিপ্লবের মাধ্যমে। এই সরকারকে অবশ্যই যৌক্তিক সময় দিতে হবে। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং করব, যতদিন সরকার সঠিক পথে থাকবে।”
তবে তিনি এই “যৌক্তিক সময়” কত হবে, তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “যৌক্তিক সময়ের ধারণা নির্ভর করবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে। আমরা কী চাই, সরকার কী চায়, জনগণ কী চায় – এসব নিয়ে আলাপ-আলোচনা হওয়া দরকার।”
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গে
জামায়াতে ইসলামীর নিষিদ্ধকরণ আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই, সে যে দলই হোক। আমাদের সংবিধানে যেকোনো ব্যক্তির সংগঠন করার অধিকার রয়েছে।”
তবে তিনি একটি শর্তের কথাও উল্লেখ করেন, “কিন্তু স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকতে হবে। যে দল বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, তাকে সমর্থন করা যাবে না।”
বিপ্লব নস্যাৎ করার অভিযোগ
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অর্জিত বিপ্লব নস্যাৎ করার জন্য এবং বিএনপির অবদান খাটো করতে পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই বিপ্লব ব্যর্থ করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র আছে। বিদেশ থেকে, বিশেষ করে ভারত থেকে এমন কিছু প্রচারণা চালানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, তা তারা নস্যাৎ করতে চায়। কিছু রাজনৈতিক ইস্যুকে তারা সাম্প্রদায়িক ইস্যু বানাতে চায়, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
উপসংহার
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অতীতের অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনের গুরুত্ব, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে তিনি আশাবাদী যে, সঠিক পদক্ষেপ ও সকলের সহযোগিতায় এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব। তাঁর মতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের সমস্যাগুলোর সমাধান করা যাবে।
Leave a Reply