আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন
এশিয়ার প্রথম এমি জয়ী আনা সাওয়াই
এশিয়ার কেউ এমি পুরস্কার জিতেছেন, এমন ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। এবার সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে ইতিহাস গড়লেন জাপানি অভিনেত্রী আনা সাওয়াই। তিনি এমি পুরস্কারের ড্রামা সিরিজ ক্যাটাগরিতে সেরা অভিনেত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছেন, যা তাকে এশিয়ার প্রথম এমি জয়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বহুল আলোচিত আমেরিকান টেলিভিশন সিরিজ ‘শোগান’-এ তার অনবদ্য অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কার অর্জন করেছেন আনা সাওয়াই। তার এই অর্জন শুধু জাপান নয়, পুরো এশিয়া জুড়ে একটি গৌরবময় মাইলফলক।
আনা সাওয়াই তার প্রতিভার মাধ্যমে এমি পুরস্কারের মঞ্চে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। সেরা অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত অভিনেত্রীরা, যেমন জেনিফার অ্যানিস্টন এবং রিজ উইদারস্পুন। তাদের মতো তারকাদের পেছনে ফেলে আনা এই সম্মান অর্জন করেছেন, যা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সম্মানের। পুরস্কারপ্রাপ্তির পর আনা জানান, “পুরস্কারের জন্য আমার নাম ঘোষণার আগপর্যন্ত আমি কাঁদছিলাম। আজ আমি একটু এলোমেলো, প্রচণ্ড আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি।”
আনা সাওয়াইয়ের নাম ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিত ছিল। ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ৯’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর থেকে তার ক্যারিয়ার গতি পায়। কিন্তু সমালোচকদের নজর কাড়েন ২০২২ সালে অ্যাপল টিভি প্লাসের ড্রামা সিরিজ ‘পাচিনকো’-তে অভিনয় করে। সেই সিরিজে তার অভিনয় দক্ষতা তাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। এরপরে মার্কিন টিভি সিরিজ ‘মনার্ক: লিগ্যাসি অব মনস্টারস’-এর মাধ্যমে তিনি আরও পরিচিতি পান।
‘শোগান’ সিরিজের জন্য আনা সাওয়াইকে বাছাই করা হয়েছিল তার প্রতিভা ও অভিনয় দক্ষতার কারণে। এবং এই সিরিজের মাধ্যমেই তিনি প্রথম জাপানি অভিনেত্রী হিসেবে এমি জিতে ইতিহাস গড়লেন।
আনা সাওয়াইয়ের জন্ম নিউজিল্যান্ডে, তবে ১০ বছর বয়সে তিনি জাপানে ফিরে আসেন। মাত্র ১১ বছর বয়স থেকে তিনি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। তার অভিনয় জীবনের শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ সালে মার্শাল আর্ট ভিত্তিক হলিউড সিনেমা ‘নিনজা অ্যাসাসিন’-এর মাধ্যমে। সিনেমাটিতে তার অভিনয় প্রশংসিত হয় এবং তিনি ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।
অভিনয়ের পাশাপাশি আনা সাওয়াই একজন গায়িকা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ২০১৩ সালে জাপানের নারী ব্যান্ড ‘ফেকি’-তে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তবে পরবর্তীতে অভিনয়ে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিনি ব্যান্ডটি ছেড়ে দেন। তিনি জানান, অভিনয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাই তার মূল লক্ষ্য ছিল, এবং এখন তিনি সেই লক্ষ্য অনেকটাই অর্জন করেছেন।
‘শোগান’ সিরিজটি আনার ক্যারিয়ারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজটির চিত্রনাট্য এবং নির্মাণশৈলীর প্রতি তার মুগ্ধতা ছিল অনস্বীকার্য। কিছুদিন আগে ‘ডব্লিউ’ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আনা বলেন, “আসলে শুটিংয়ে নিজের কাজ নিয়ে তেমন কিছু ভাবছিলাম না। সিরিজটির চিত্রনাট্য এমন দুর্দান্ত ছিল যে, একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। নিজের পারফরম্যান্স কেমন হচ্ছে, তা নিয়ে তেমন নিশ্চিত ছিলাম না। এমনকি শুটিং শেষ হওয়ার পরও নয়।”
আনার এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, তার অভিনয়ে এতটা স্বাভাবিকতা ছিল যে, কাজটি করতে গিয়ে তিনি তার দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ করেননি। তার এই দক্ষতাই তাকে এমি পুরস্কার এনে দিয়েছে, যা তার ক্যারিয়ারের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
‘শোগান’-এ অভিনয়ের পর থেকে আনা সাওয়াইয়ের জন্য নতুন নতুন আন্তর্জাতিক প্রকল্পের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। ৩২ বছর বয়সী এই গায়িকা-অভিনেত্রী এখন নতুন উচ্চতায় পা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি এখন অভিনয়ে মনোযোগী থাকলেও, গানের প্রতিও তার ভালোবাসা রয়েছে। তিনি নিজে গান করেন, তবে সেটা নিজের ইচ্ছামতো, কোনো ব্যান্ডের অংশ হিসেবে নয়।
আনা সাওয়াইয়ের এই সাফল্য এশিয়ার চলচ্চিত্র ও বিনোদন জগতের জন্য একটি বড় প্রেরণা। তার এই অর্জন এশিয়ার নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। অভিনয় এবং গানের প্রতি তার একনিষ্ঠতা এবং দক্ষতা তাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।
আনা সাওয়াইয়ের এই অর্জন শুধু তার নিজের জন্য নয়, বরং পুরো এশিয়া মহাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। তিনি প্রথম এশীয় অভিনেত্রী হিসেবে এমি পুরস্কার অর্জন করে দেখিয়েছেন, প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কেউ বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
এই অর্জন এশিয়ার অভিনয়শিল্পীদের জন্য আরও বড় সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আনার সাফল্য এশিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে অংশ নেওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে। এছাড়াও, এশিয়ার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার এই সাফল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আনা সাওয়াইয়ের এমি জয় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তার অসাধারণ প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আনার এই সাফল্য ভবিষ্যতে এশিয়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য আরও বড় পথ তৈরি করবে এবং নতুন প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা দেবে।
Leave a Reply