আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন
এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপে নতুন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল দলের ।বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে যুব ফুটবলে সাফল্য পাওয়া অনেক বড় বিষয়। বিশেষ করে যখন তা হয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল দল একটি আশ্চর্যজনক যাত্রা সম্পন্ন করে। যদিও তারা কোনো ম্যাচ না জিতেই রানার্সআপ হয়েছিল, এই যাত্রা বাংলাদেশ ফুটবলের ভবিষ্যতের জন্য এক ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়। এখন, ঠিক এক মাস পর, এই একই দল আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে অংশ নিতে। এবারের মঞ্চ হলো কম্বোডিয়া।
ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দল কোনো ম্যাচ না জিতেও রানার্সআপ হয়, যা প্রশংসার যোগ্য। গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে বাংলাদেশ একটি ড্র এবং একটি হারের মুখোমুখি হয়। প্রথম ম্যাচে তারা সিংহল ফুটবল দলের সঙ্গে ১-১ ড্র করে, যেখানে বাংলাদেশের একমাত্র গোলটি আসে দ্বিতীয়ার্ধে। এই ম্যাচে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সাহসিকতা ও দৃষ্টান্তমূলক রক্ষণের প্রশংসা করে সবাই।
দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল ভারতীয় দলের বিপক্ষে। তবে এই ম্যাচে ভারতীয় দল ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী এবং বাংলাদেশ দলের জন্য প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন প্রমাণিত হয়। ২-০ ব্যবধানে হেরে গেলেও বাংলাদেশ দল নিজেদের সুরক্ষা ভালোভাবে বজায় রেখেছিল এবং কোনো বড় ব্যবধানে হারতে দেয়নি।
সেমিফাইনালে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান দল। এটি ছিল একটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ, যা সমাপ্তি ঘটেছিল ২-২ সমতায়। যদিও ম্যাচটি ড্র হয়, টাইব্রেকারে বাংলাদেশের ছেলেরা নিজেদের অসাধারণ মানসিক শক্তি প্রদর্শন করে এবং জয় তুলে নেয়। টাইব্রেকারে এই জয় বাংলাদেশের জন্য ছিল এক বিশাল প্রেরণাদায়ক মুহূর্ত। গোটা ম্যাচে দলের আক্রমণাত্মক ফুটবল ও শক্তিশালী রক্ষণভাগ সবার দৃষ্টি কাড়ে।
বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে জয় পাওয়ার পর সরাসরি ফাইনালে উঠে যায়। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত, যারা গ্রুপ পর্বে তাদের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল। তবে ফাইনাল ম্যাচে ভারতের শক্তিশালী খেলা এবং দলের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। ভারত ২-০ ব্যবধানে বাংলাদেশকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়, তবে বাংলাদেশের ছেলেরা তাদের মানসিক শক্তি এবং খেলার প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল গোল করার ক্ষমতার ঘাটতি। পুরো সাফ টুর্নামেন্ট জুড়ে বাংলাদেশ মাত্র তিনটি গোল করতে সক্ষম হয়। এই গোলগুলো ছিল দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা দলের খেলার সমন্বয় এবং আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজিতে কিছুটা উন্নতি করার প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। তবে যেহেতু এই দলটি অনূর্ধ্ব-১৭ স্তরে ছিল, সাফল্য অর্জনের পথে এমন সমস্যাগুলো অপ্রত্যাশিত নয়।
ভুটানে সাফল্যের পর, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দল আরেকটি বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে—এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব। এই প্রতিযোগিতা শুরু হবে ১৯ অক্টোবর এবং এবার দলটি তাদের নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য আরও বেশি প্রস্তুত।এইবারের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তাদের প্রতিপক্ষ দলগুলি হলো আফগানিস্তান, ফিলিপাইন, ম্যাকাও, এবং স্বাগতিক কম্বোডিয়া। প্রতিটি দলই বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করবে। তবে বাংলাদেশ দল তাদের অভিজ্ঞতা এবং সাফল্য থেকে শেখার চেষ্টা করছে।সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হওয়ার ঠিক এক মাসের মাথায়, আজ রাতেই বাংলাদেশ দল কম্বোডিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক কম্বোডিয়া। কম্বোডিয়া তাদের নিজ মাঠে খেলবে, যা বাংলাদেশের জন্য কিছুটা চাপের কারণ হতে পারে। তবে ভুটানে পাওয়া আত্মবিশ্বাস এবং শৃঙ্খলা তাদের সাহায্য করবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে।
আফগানিস্তান ফুটবল দল তাদের শারীরিক শক্তি এবং আক্রমণাত্মক খেলার জন্য পরিচিত। বাংলাদেশ দলের জন্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয় পাওয়া এবং কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াই করার অভিজ্ঞতা তাদের কাজে লাগবে। ফিলিপাইনের অনূর্ধ্ব-১৭ দল খেলোয়াড়দের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সংঘবদ্ধ খেলার জন্য খ্যাত। তবে বাংলাদেশের দলের কৌশলগত ও রক্ষনাত্মক দক্ষতা এই ম্যাচে কার্যকর হতে পারে।ম্যাকাও দলের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নেই। তবে এই ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার। কারণ ম্যাকাও সাধারণত এশিয়ার বড় দলগুলির মধ্যে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নয়। স্বাগতিক কম্বোডিয়া তাদের নিজস্ব মাঠে খেলার সুবিধা পাবে। মাঠে তাদের সমর্থকরা উপস্থিত থাকবে, যা তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা। তবে বাংলাদেশ দল যদি সঠিকভাবে তাদের কৌশল প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে এই চ্যালেঞ্জও অতিক্রম করা সম্ভব।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের জন্য এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব একটি বড় সুযোগ হতে চলেছে। ভুটানে পাওয়া অভিজ্ঞতা এবং আত্মবিশ্বাস এই প্রতিযোগিতায় তাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। দলের খেলার উন্নতি ও নতুন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মানসিক শক্তি প্রদর্শন করতে হবে।
গোল করার ক্ষমতার উন্নতি, আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজির সঠিক প্রয়োগ এবং প্রতিপক্ষের দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর কৌশল তাদের বাছাইপর্বে সাফল্য এনে দিতে পারে। তবে, আসন্ন ম্যাচগুলিতে মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকা এবং দলের ভেতরের বন্ধন বজায় রাখা হবে এই টুর্নামেন্টে তাদের সফলতার মূল চাবিকাঠি।
কোচ সাইফুল বারী বলেন, “দলটা গোল করতে পারছে না। এটা নিয়েই কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকছে।” এই উদ্বেগ অনেকের মধ্যেই রয়েছে, বিশেষ করে ফ্যানদের মধ্যে, যারা তরুণ এই ফুটবল দলটির ওপর বড় আশা করে বসে আছেন। দেশের ফুটবলে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের সাফল্য ভবিষ্যৎ সিনিয়র দলের জন্য একটি ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়, তাই এ সমস্যার সমাধান এখনই দরকার বলে মনে করছেন অনেকে।
গোল করার সমস্যাটি ফুটবলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির একটি। বিভিন্ন ফুটবল বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকরা বলছেন যে এই সমস্যার মূল কারণ দলের আক্রমণাত্মক রণকৌশলের ঘাটতি এবং ফরোয়ার্ড লাইনে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব। তাছাড়া, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেদ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং সঠিক মুহূর্তে ফিনিশিংয়ের ক্ষমতার অভাবও এখানে ভূমিকা রাখছে।
কোচ সাইফুল বারী এ বিষয়ে বলেন, “আমাদের দল খুবই প্রতিভাবান। তবে, গোল করার জন্য শুধুমাত্র আক্রমণাত্মক খেলাই যথেষ্ট নয়, আমাদের খেলোয়াড়দের আরও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভেদী শটের প্রয়োজন। এই বিষয়টিই এখন আমাদের দলের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।”
যদিও অনূর্ধ্ব-১৭ দলটি তাদের প্রস্তুতির সময় নানা রকম কৌশল অনুশীলন করছে, কোচ বিশ্বাস করেন যে দলের খেলোয়াড়দের মানসিকতা এবং শারীরিক প্রস্তুতিতে আরও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। দলের পাসিং স্টাইল, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙার জন্য স্পেস খোঁজা, এবং শেষ মুহূর্তে বল নিয়ন্ত্রণ করে গোল করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
কোচ বলেন, “আমাদের খেলোয়াড়রা মাঠে যথেষ্ট পরিশ্রম করছে, কিন্তু আমরা এখনও আমাদের আক্রমণভাগে উন্নতি আনতে পারিনি।” তিনি আরও যোগ করেন, “প্রতিটি ম্যাচেই আমরা প্রতিপক্ষের গোলমুখে বল পৌঁছাতে সক্ষম হলেও, ফিনিশিংয়ের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ নিয়ে আমরা আগামী দিনগুলোতে আরও কাজ করব।”
যদিও গোল খরার সমস্যা নিয়ে কোচ চিন্তিত, তবুও তিনি বিশ্বাস করেন যে তরুণ এই দলটি ভবিষ্যতে ভালো পারফর্ম করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের ফুটবল সম্প্রদায় এবং ভক্তরা আশা করছেন, টিমটি শীঘ্রই তাদের গোল করার দক্ষতা বাড়াবে এবং দেশের জন্য সাফল্য নিয়ে আসবে। কোচ সাইফুল বারীও দলটির উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।
আরো জানুন ….. ফিল সিমন্সের বাংলাদেশে আগমন
তিনি বলেন, “এই দলটি আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় সম্ভাবনা রাখে। যদি আমরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারি এবং আমাদের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি, তবে ভবিষ্যতে আমরা অনেক ভালো ফলাফল দেখতে পাব।”
অনূর্ধ্ব-১৭ দলটি শুধু একটি টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে না, এটি দেশের ফুটবল উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণ খেলোয়াড়দের উন্নয়ন দেশের ফুটবল মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কোচ সাইফুল বারীও এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, “এই দলটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এখান থেকে প্রতিভা গড়ে তুলতে পারি, তাহলে জাতীয় দলের জন্য আরও ভালো খেলোয়াড় তৈরি করা সম্ভব হবে।”
ফুটবল ভক্তরা অনেকটাই আশা নিয়ে বসে আছেন যে এই দলটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করবে। তবে, গোল খরার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তাদের সমর্থনও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের তরুণ খেলোয়াড়দের প্রতি সমর্থন জানানো হলে তারা আরও ভালো পারফর্ম করতে সক্ষম হবে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভালো করার জন্য শক্তিশালী আক্রমণভাগের প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৭ দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য দেশের দলগুলো সাধারণত আক্রমণে খুবই শক্তিশালী হয় এবং তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গেলে বাংলাদেশের দলকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।
কোচ সাইফুল বারী বলেন, “আন্তর্জাতিক ম্যাচে আমাদের আক্রমণভাগের দুর্বলতা বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”
বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং বিশেষ করে গোল করতে না পারার সমস্যাটি নিয়ে কোচ সাইফুল বারীর চিন্তিত থাকলেও তিনি দলটির উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। ফুটবল ফ্যানরা আশা করছেন যে দলটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো পারফর্ম করবে এবং দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে। গোল খরার এই সমস্যা সমাধান করতে পারলে, বাংলাদেশের ফুটবল দল সামনের দিনগুলোতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
Leave a Reply