আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন
দেশের জনগনের মাঝে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,তা হলো ইলিশের দাম , দেশীয় বাজার বনাম রপ্তানি মূল্য: কেন এত ফারাক?? শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে। প্রতি বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূজা উদযাপনের সময় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনে ৭টি ট্রাকে করে ভারতে ২৫ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এই ইলিশের আকার ছিল ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজির মধ্যে। প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে ১০ মার্কিন ডলার বা ১,১৮০ টাকায়। তবে এ রপ্তানিমূল্য নিয়ে দেশীয় বাজারে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ ও প্রশ্ন।
যশোরের স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম এখন চড়া। গতকাল শহরের বড় বাজারের পাইকারি আড়তে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১,৬৫০ টাকায়। তার মানে, একই আকারের ইলিশ ভারতে প্রায় ৫০০ টাকা কম দামে রপ্তানি হচ্ছে। এর পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে ইলিশের দাম আরও বেশি। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ইলিশের দাম ২,০০০ টাকার বেশি ছিল। অর্থাৎ, দেশের ভোক্তাদের প্রতি কেজি ইলিশ কিনতে ভারতীয়দের তুলনায় প্রায় ৯০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
এই বৈষম্য কেন তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে বাজারে প্রশ্ন উঠছে। বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ইলিশ রপ্তানির বর্তমান মূল্য কয়েক বছর আগের একটি পরিপত্রের ভিত্তিতে নির্ধারিত। তখনকার বাজারমূল্যের সঙ্গে মিল রেখে ১০ ডলারে প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য ঠিক করা হয়েছিল। তবে তিনি মনে করেন, দেশীয় বাজারের বর্তমান দামের সঙ্গে সংগতি রেখে ইলিশের রপ্তানিমূল্য সমন্বয় হতে পারে।
যশোরের বড় বাজারের মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, “স্থানীয় বাজারে যেখানে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ ১,৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেখানে ভারতে ১,১৮০ টাকায় রপ্তানি হচ্ছে, যা মোটেই বোধগম্য নয়।” তিনি আরও জানান, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম আকারের ইলিশও পাইকারি পর্যায়ে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশের ভোক্তারা এই উচ্চমূল্যের কারণে ক্ষুব্ধ। তারা মনে করছেন, দেশের ভোক্তাদের চেয়ে বিদেশে ইলিশ কম দামে রপ্তানি করাটা অবিচার। যেখানে দেশের বাজারে ইলিশের দাম প্রতিদিন বাড়ছে, সেখানে এই বৈষম্য স্বাভাবিকভাবেই অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
আরও জানুন –ইলিশ রপ্তানি বন্ধে হাইকোর্টে রিট
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে প্রথমে ৩,০০০ টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পরে সেই পরিমাণ কমিয়ে ২,৪২০ টন করা হয়। ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ইলিশ রপ্তানি করবে এবং একটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন রপ্তানি করবে। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল ২৫ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। তবে এই ইলিশ রপ্তানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে, যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত।
ভারতের কলকাতাভিত্তিক মাছ আমদানিকারক সংগঠন ‘ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (এফআইএ) বাংলাদেশের সরকারের কাছে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ রপ্তানির জন্য অনুমতি চেয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ সরকার বিশেষ বিবেচনায় রপ্তানির অনুমতি দেয়।
বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে শুধুমাত্র দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ বিবেচনায় ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে। এতে প্রতিবছর দেশের ভোক্তারা মনে করেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর আগে ইলিশ রপ্তানি করাটা অন্যায্য। বিশেষ করে যখন ইলিশের দাম আকাশচুম্বী, তখন দেশের ভোক্তারা ইলিশ কিনতে সমস্যার মুখোমুখি হন।
বাজারে ইলিশের উচ্চমূল্যের কারণে অনেকেই মনে করছেন, সরকারের উচিত দেশীয় বাজারের চাহিদা ও দামের সঙ্গে সংগতি রেখে ইলিশের রপ্তানি নীতি পুনর্বিবেচনা করা। যখন দেশের ভোক্তারা উচ্চমূল্যে ইলিশ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, তখন রপ্তানির মূল্য কম রাখা অর্থনৈতিকভাবে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হচ্ছে না।
মৎস্য অধিদপ্তরের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, “বর্তমানে ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি আকারের ইলিশ ১০ ডলার বা ১,১৮০ টাকা কেজি দরে রপ্তানি হচ্ছে। তবে বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে এই মূল্য পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।”
ইলিশ দেশের একটি মূল্যবান সম্পদ। দেশের ভোক্তাদের চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারের মধ্যে সুষম সম্পর্ক তৈরি করা জরুরি। দেশীয় বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে ইলিশ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, যা ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। সরকার যদি ইলিশের রপ্তানি নীতি পুনর্বিবেচনা করে, তবে এটি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
Leave a Reply