আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
ইজরায়েলের ইরান আক্রমণের প্রস্তুতি: ফাঁস হলো গোপন নথি, উঠছে আমেরিকার জড়িত থাকার প্রশ্ন

ইজরায়েলের ইরান আক্রমণের প্রস্তুতি: ফাঁস হলো গোপন নথি, উঠছে আমেরিকার জড়িত থাকার প্রশ্ন

ইজরায়েলের ইরান আক্রমণের প্রস্তুতি
ইজরায়েলের ইরান আক্রমণের প্রস্তুতি

ইরান ও ইজরায়েলের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা: সামরিক প্রস্তুতি ও ফাঁস হওয়া গোপন নথির বিশ্লেষণ

ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে সামরিক সংঘাতের উত্তেজনা বহু বছর ধরে চলে আসছে, তবে সাম্প্রতিক এক গোপন নথি ফাঁসের ঘটনায় এই উত্তেজনা নতুন এক স্তরে পৌঁছেছে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ইরানের ওপর একটি বড় ধরনের হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে, যার সঙ্গে আমেরিকার সম্পৃক্ততা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এই গোপন নথি ফাঁস হওয়ার পর পরিস্থিতি আরো ঘনীভূত হয়েছে।

গোপন সামরিক নথির ফাঁস

‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইজরায়েল এবং ইরানের মধ্যে আসন্ন সামরিক সংঘাতের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল জিয়োস্প্যাকিয়াল-ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (এনজিএ) সুরক্ষিত নথি ফাঁস হয়েছে, যা ইজরায়েলের সম্ভাব্য সামরিক হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ প্রকাশ করেছে। ফাঁস হওয়া নথিগুলিতে ইরানের ওপর সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনার বিস্তৃত তথ্য দেওয়া হয়েছে।

আমেরিকার ভূমিকা

এই ফাঁস হওয়া নথির মধ্যে আমেরিকার গোয়েন্দা উপগ্রহের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি এবং তথ্যও রয়েছে। এনজিএ মূলত উপগ্রহের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করে। ইজরায়েলের সামরিক অনুশীলনের সঙ্গে সম্পর্কিত এই গোপন রিপোর্টের ভিত্তিতে ইজরায়েলের বিমান বাহিনী কিভাবে ইরানে হামলা করতে পারে, তার সম্ভাব্য বিবরণ রয়েছে। এই নথি ফাঁস হওয়ার ফলে আমেরিকা ও ইজরায়েলের সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আরো পড়ুনইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা

ইজরায়েলের সামরিক প্রস্তুতি

ফাঁস হওয়া নথিগুলির একটি অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ইজরায়েলের বিমান বাহিনী ইরানে হামলা চালানোর জন্য নিয়মিত অনুশীলন করছে। নথিতে বেশ কয়েকটি ছবি ও উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে ইজরায়েলি বিমান বাহিনীর কৌশলগত প্রস্তুতি দেখানো হয়েছে। আইডিএফ নিয়মিতভাবে মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মাঝ আকাশে যুদ্ধবিমানকে জ্বালানি ভরার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমার ব্যবহার দেখানো হয়েছে।

ইজরায়েল যে ইরানের ওপর হামলা করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত, তা এই নথি থেকে স্পষ্ট। পাশাপাশি, ইজরায়েলের সৈন্যরা উদ্ধার ও প্রতিরক্ষামূলক অনুশীলনেও জোর দিচ্ছে, কেননা ইরানের তরফ থেকে প্রত্যাঘাত আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই নথি ফাঁসের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এই তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এনজিএ থেকে ফাঁস হওয়া নথিগুলি ইরান-সমর্থিত টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে প্রকাশ করা হয়েছে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি’-র (সিআইএ) প্রাক্তন কর্মকর্তারা এই ঘটনাকে আমেরিকা ও ইজরায়েলের সম্পর্কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। সিআইএর প্রাক্তন ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মিক মুলরয় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এই ধরনের নথি ফাঁস হওয়া এক বড়সড় গলদ। এতে আমেরিকা ও ইজরায়েলের মধ্যে আস্থা নষ্ট হতে পারে এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।”

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের সম্ভাব্যতা

ইজরায়েলের সামরিক প্রস্তুতি, ইরানে হামলার কৌশল, এবং আমেরিকার সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে প্রচুর আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষত ইজরায়েলের পরমাণু হামলার পরিকল্পনা নিয়ে গোপন তথ্য ফাঁস হওয়া যুদ্ধের সম্ভাবনাকে আরো তীব্র করেছে। তবে এই নথিগুলিতে ইজরায়েলের পরমাণু হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও, ইরানে বড় ধরনের আক্রমণের প্রস্তুতির কথা রয়েছে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পরিকল্পনা থাকতে পারে। তাই ইজরায়েল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এই উত্তেজনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

ইজরায়েলের পাল্টা পরিকল্পনা ও নেতানিয়াহুর অবস্থান

ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানার জন্য ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অনুমোদন দিয়েছেন। এর আগে ইরান ইজরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল, যা ইজরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা রক্ষা করা হয়েছিল। এর পরই নেতানিয়াহু পাল্টা আঘাতের নির্দেশ দেন।

ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু

ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু

ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যকার এই দ্বন্দ্ব শুধুমাত্র সামরিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোতেও পড়ছে। ইরানের পরমাণু কার্যক্রম ও আঞ্চলিক আধিপত্য ইজরায়েলের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা দেয়, এবং ইজরায়েল এই হুমকির বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ

ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আসছে।

ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে, এবং এই গোপন নথি ফাঁস হওয়ার ঘটনা এই উত্তেজনাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ইজরায়েল তার প্রতিরক্ষা কৌশল অনুযায়ী ইরানের ওপর একটি বড় ধরনের হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটতে পারে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web