আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের জীবন ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থা এজেন্সি ফর ফান্ডামেন্টাল রাইটস (এফআরএ) সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যা এই অবস্থার প্রতিফলন ঘটায়। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রায় অর্ধেক মুসলিম তাদের দৈনন্দিন জীবনে বৈষম্য ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের সম্মুখীন হচ্ছেন।
“বিং মুসলিম ইন ইউরোপ: এক্সপেরিয়েন্সেস অব মুসলিমস“ শিরোনামে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে, যেখানে ইইউ’র ১৩টি দেশের ৯,৬০০ মুসলিম অংশগ্রহণ করেছেন। জরিপটি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এতে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রীস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং সুইডেনের মুসলিমরা অংশ নেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের আগে ইউরোপের দেশগুলোতে মুসলিমরা বর্ণবাদের শিকার হওয়ার হার ছিল ৩৯%। কিন্তু ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের অক্টোবরের মধ্যে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭%। এর ফলে মুসলিমদের জীবনযাত্রা ও সামাজিক অবস্থান কঠিন হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও, জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তাদের সন্তানেরা স্কুলে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন এবং চাকরির সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অসমতা অনুভব করছেন। বাড়ি ভাড়া বা কেনার ক্ষেত্রে বৈষম্যও তাদের জীবনে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বিশেষভাবে যেসব দেশে মুসলিমরা বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তাদের মধ্যে অস্ট্রিয়া (৭১%), জার্মানি (৬৮%), এবং ফিনল্যান্ড (৬৩%) উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, সুইডেন (২২%), স্পেন (৩০%), এবং ইতালি (৩৪%) এমন দেশ যেখানে মুসলিমরা তুলনামূলকভাবে কম বৈষম্যের শিকার।
আরও জানুন –‘মধ্যপ্রাচ্য এমন একটি অঞ্চল হবে, যেখানে বিশ্ব শেষ হয়ে যেতে পারে’- ডোনাল্ড ট্রাম্প
গার্ডিয়ান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই জরিপ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগেই সম্পন্ন হয়েছে, সেইদিন গাজা থেকে ইসরায়েলে হামলার পর ইউরোপের মুসলিম বিরোধী ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ এবং ভয় আরও বেড়েছে।
জরিপের সহকারী লেখক ভিদা বেরেসনেভিসিউটি বলেন, “মুসলমানদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে এবং ইইউতে মুসলিম হিসেবে বাস করা আরও জটিল হয়ে উঠছে।” এফআরএ’র পরিচালক শিরপা রাউতিয়ো বলেন, “মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইউরোপে বর্ণবাদ ও বৈষম্য উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের কারণে আরও উসকে উঠছে।”
মুসলিমদের অধিকার রক্ষায় ইউরোপীয় সরকারগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থন বাড়ানোর জন্য সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদেরকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়াও, শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈষম্য মোকাবেলার জন্য জনগণের মধ্যে প্রয়োজনীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা দরকার।
ইউরোপে মুসলিমদের জীবনযাত্রা ও সামাজিক অবস্থান গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বৈষম্য ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব।
উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্যোগের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইউরোপীয় দেশগুলোতে মুসলিমদের জীবনযাত্রার উন্নয়ন এবং বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
Leave a Reply