আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ নিউজ :
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সতর্কতা: সঠিক ব্যবহার এবং ভুল ধারণা

অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সতর্কতা: সঠিক ব্যবহার এবং ভুল ধারণা

অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সতর্কতা: সঠিক ব্যবহার এবং ভুল ধারণা
অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সতর্কতা: সঠিক ব্যবহার এবং ভুল ধারণা

অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সতর্কতা

অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সতর্কতা: সঠিক ব্যবহার এবং ভুল ধারণা হলো এমন একটি শক্তিশালী ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ দূর করতে সহায়তা করে। তবে, অধিকাংশ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখেন না। অনেক সময় আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করি বা সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করে মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করে দেই, যা আমাদের শরীরের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। আজকের আলোচনায় আমরা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের গুরুত্ব, এর সঠিক ব্যবহার, এবং কীভাবে এই ওষুধের যথাযথ ব্যবহার না করলে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

অ্যান্টিবায়োটিক কী?
অ্যান্টিবায়োটিক এমন একটি ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ রোধ বা নির্মূল করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ভাইরাসের ক্ষেত্রে কাজ করে না, যেমন- সর্দি, কাশি বা সাধারণ ফ্লুতে। মূলত, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে বন্ধ করে বা সরাসরি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। এ কারণে, এটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ যেমন- নিউমোনিয়া, টিউবারকুলোসিস, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক নিয়মে এবং নির্ধারিত ডোজে গ্রহণ করা খুবই জরুরি। এটি সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ (এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স) নামে পরিচিত। এর ফলে পরবর্তীতে যখন শরীরে আবার কোনো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে, তখন ঐ অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না।

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের কারণে অনেক সাধারণ রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, কারণ সেই রোগের জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক আর কার্যকর থাকে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকে জনস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম একটি বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সাধারণ ভুলগুলো
আমাদের মধ্যে অনেকেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কিছু সাধারণ ভুল করেন, যা পরবর্তীতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই ভুলগুলো এড়াতে হলে সচেতন হতে হবে।

১. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা
অনেকেই ছোটখাটো সংক্রমণ হলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই আগের প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দেন। এটি একটি বড় ভুল। প্রতিটি সংক্রমণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে, এবং কেবলমাত্র একজন পেশাদার ডাক্তারই তা নির্ধারণ করতে পারেন।

২. অর্ধেক ডোজ খাওয়ার পর অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করা
অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স মাঝপথে বন্ধ করলে শরীরের ভেতরে ব্যাকটেরিয়া পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো পরবর্তীতে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে আরও জটিল সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।

৩. অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা
সাধারণত সর্দি, কাশি বা ভাইরাসজনিত অসুখে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অনেকেই এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকেন। অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

৪. অ্যান্টিবায়োটিক শেয়ার করা বা অন্যের প্রেসক্রিপশন ব্যবহার করা
অ্যান্টিবায়োটিক কখনোই অন্যের সাথে শেয়ার করা উচিত নয়। প্রতিটি মানুষের সংক্রমণ ভিন্ন হতে পারে, এবং সেই অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক নির্ধারণ করা হয়। অন্যের প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।

 

আরো জানুন- গ্রিন টি কি সত্যিই ওজন কমায়?

 

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধের ঝুঁকি
অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত বা ভুল ব্যবহারের ফলে যে একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তা হলো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। এর ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণগুলো:
অপ্রয়োজনীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা।
পূর্ণ ডোজ শেষ না করা।
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার, যেমন- ভাইরাসজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার।
গবাদি পশুতে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার।
অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অ্যান্টিবায়োটিক একটি শক্তিশালী ওষুধ হলেও, এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন:

পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া: অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে পেটে ব্যথা বা ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে, কারণ এটি শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি উপকারী ব্যাকটেরিয়াকেও ধ্বংস করে দেয়।

অ্যালার্জি: কিছু মানুষ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে এবং তাদের মধ্যে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন- ত্বকে লাল দাগ, চুলকানি, অথবা শ্বাসকষ্ট।

ইস্ট ইনফেকশন: কিছু অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে ইস্ট ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে, বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যা আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

১. ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন না। ডাক্তার যদি অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করেন, তবে তার পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করুন।

২. কোর্স শেষ করুন
অ্যান্টিবায়োটিকের পূর্ণ কোর্স শেষ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেন ব্যাকটেরিয়া পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করলে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

৩. প্রবায়োটিক গ্রহণ করুন
অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হতে পারে। তাই, প্রবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে উপকারী ব্যাকটেরিয়া পুনরায় তৈরি হতে পারে এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

৪. অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক থেকে বিরত থাকুন
সর্দি, কাশি বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন না, কারণ এসব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। বরং এ ধরনের সংক্রমণের জন্য বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি পান এবং সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিক একটি অত্যন্ত কার্যকরী ওষুধ, তবে এর সঠিক ব্যবহার না করলে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সময় ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা, পূর্ণ ডোজ শেষ করা, এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারে বিরত থাকা আমাদের দায়িত্ব। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি এড়াতে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

পোষ্ট টি শেয়ার করে দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024 desherbulletin.Com
Developed By One Planet Web