আজ সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ পূর্বাহ্ন
অ্যাংজাইটি (Anxiety) বা উদ্বেগ হলো একটি স্বাভাবিক মানবিক অনুভূতি , আর অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার মানুষের উদ্বেগ বা স্বাভাবিক অনুভূতি অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি করে এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে , যা জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে। অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার রোগটি একাধিক ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণে হতে পারে এবং এটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে গণ্য হয়।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:
এটি একটি সাধারণ উদ্বেগের সমস্যা, যেখানে ব্যক্তিরা প্রতিদিনের ছোটখাটো বিষয়গুলোতে অতিরিক্ত উদ্বেগ অনুভব করেন। এর ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটে এবং জীবনের আনন্দ কমে যায়।
প্যানিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হঠাৎ করে তীব্র আতঙ্কের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এই সময় তারা শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং অস্থিরতা অনুভব করেন।
সামাজিক পরিস্থিতিতে অস্বস্তি বা লজ্জা অনুভব করাকে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বলা হয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে এবং সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিতে অংশ নিতে অস্বস্তি বোধ করেন।
এই ডিসঅর্ডারে ব্যক্তিরা কিছু চিন্তা বা আচরণ নিয়ে অবিরাম চিন্তিত থাকেন। যেমন, অতিরিক্ত হাত ধোয়া বা সঠিকভাবে কিছু করা।
কোনো ট্রমাটিক ঘটনা পরবর্তী সময়ে মনোসংযোগ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে, যা PTSD হিসেবে পরিচিত।
আরো পড়ুন- বাইপোলার ডিসঅর্ডার (Bipolar Disorder): কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার সাধারণত বিভিন্ন কারণের ফলস্বরূপ হতে পারে:
যদি পরিবারের মধ্যে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের ইতিহাস থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তির মধ্যেও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারগুলির ভারসাম্যহীনতা, বিশেষত সেরোটোনিন এবং ডোপামিন, অ্যাংজাইটির সৃষ্টি করতে পারে।
শৈশবের মানসিক আঘাত, পারিবারিক সমস্যাসহ দৈনন্দিন জীবনের চাপও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
মেনোপজ বা গর্ভাবস্থার সময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন অ্যাংজাইটি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
কিছু শারীরিক রোগ, যেমন হার্টের অসুস্থতা বা থাইরয়েডের সমস্যা, অ্যাংজাইটির কারণ হতে পারে।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের লক্ষণ বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
প্রতিদিনের ছোটখাটো বিষয়েও উদ্বেগ অনুভব করা।
অ্যাংজাইটির সময় হৃদস্পন্দন দ্রুত হয় এবং বুক ধড়ফড় করে।
অতিরিক্ত ঘাম এবং অস্থিরতা অনুভব করা।
রোগী ঘুমাতে সমস্যায় পড়েন এবং চিন্তায় ভোগেন।
সামাজিক বা নতুন পরিস্থিতিতে অস্বস্তি অনুভব করা।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা করা সম্ভব এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রোগী সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। চিকিৎসা প্রক্রিয়া সাধারণত দুটি প্রধান দিক নিয়ে গঠিত:
কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি। এই থেরাপির মাধ্যমে রোগী নেতিবাচক চিন্তা চিহ্নিত করতে এবং সেগুলো মোকাবিলার কৌশল শিখতে পারেন।
কিছু ক্ষেত্রে অ্যাংজাইটির চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ রোগীর মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
অ্যাংজাইটি কমানোর জন্য কিছু কার্যকর কৌশল রয়েছে:
নিয়মিত মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের জন্য উপকারী এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
সঠিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
পাল্টানো এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক এবং মনকে শান্ত রাখে।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার একটি গুরুতর সমস্যা, তবে এটি সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। রোগীর আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবের সমর্থন এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করতে পারে।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার একটি জটিল এবং গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে এটি সঠিক চিকিৎসা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে মোকাবিলা করা সম্ভব। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এই সমস্যায় ভুগছেন, তবে দ্রুত একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন, অ্যাংজাইটির সাথে লড়াই করা সম্ভব এবং একটি সুখী, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা যায়।
Leave a Reply